নিজস্ব সংবাদদাতা | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮ : ৩০

ঈশ্বরের অসীম কৃপা, তাঁকে কখনও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। গীতার উপরে হাত রেখে বলতেও হয়নি, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। টলিউড বলে, তাঁর একটাই চেষ্টা, তিনি যেন সবসময় সত্যের পথে থাকেন। হইচই স্টুডিওর প্রথম সিরিজ ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’তে সেই টোটা রায়চৌধুরী মিথ্যের বেসাতি করেন! তিনি আদালতে বিরোধী পক্ষের দুঁদে আইনজীবী। তাঁর পরিচিতদের দাবি, ১০০টা শকুন মরলে নাকি আইনজীবী জয়রাজ সিনহার মতো উকিলের জন্মায়! যিনি সাত বছরে মাত্র একটি মামলায় হেরেছেন। নিজেকে তাই জয়রাজ "সিনহা" নয় সিংহ মনে করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে কখনও সত্যি-মিথ্যের সন্ধিক্ষণে দাঁড়াতে হলে কী করেন অভিনেতা? সদ্য মুক্তি পেয়েছে পরিচালক চন্দ্রাশিস রায়ের প্রথম সিরিজের ট্রেলার। তারই সাংবাদিক সম্মেলনে এসে আজকাল ডট ইনের প্রশ্নের জবাব টোটার দাবি, ‘‘বাস্তবে আমি জয়রাজ নই। যার কাছে সত্যিকে মিথ্যে আর মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করা বাঁ হাতের খেলা। সত্যের বিপক্ষে ভুলেও লড়াইয়ে নামি না। আর সত্যি আমার পক্ষে থাকলে দুনিয়ার সঙ্গে ১০০ শতাংশ লড়ে নিই।’’

টোটা কোনও দিন আদালত যাননি। কিন্তু আইনজীবীদের কাছে থেকে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা আর বাকিটা সামাজিক মাধ্যম। আইনের কিছু কিছু কথাও শিখতে হয়েছে তাঁকে। যাতে পর্দায় বিপক্ষের আইনজীবীকে বাস্তবসম্মত ভাবে পর্যুদস্ত করতে পারেন। একই সঙ্গে পরিচালকের নির্দেশ। সব মিলিয়েই তিনি চরিত্রটি গড়েছেন। সিরিজের পটভূমিকায় ২০০২-এর ইন্সপেক্টর বাপি সেনের হত্যাকাণ্ড। খবরটা যখন নিয়মিত সংবাদপত্র পড়তেন ভিতরে ভিতরে কতটা ফুঁসতেন? আবারও সত্য কথাই বললেন অভিনেতা, ‘‘খুব রাগ হয়েছিল। অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে, যিনি রক্ষা করতেন আসতেন সেই রক্ষকের কোনও নিরাপত্তা নেই!’’ সহ-অভিনেতা মিমি চক্রবর্তীর প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ তিনি। দাবি, প্রথম সিরিজ সবাই সাধারণ সোজা বিষয় বাছেন। মিমি বলেই এত শক্ত একটা চরিত্র অনায়াসে ফুটিয়ে তুললেন। সহ-অভিনেতার এই চেষ্টাকে তিনি কুর্নিশ করেছেন। এও জানিয়েছেন, পর্দায় কিন্তু জয়রাজ বিপক্ষের উকিল পৃথা রায়কে অভিনয়ের দিক থেকে সত্যিই এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি।



একই দাবি মিমি চক্রবর্তী ওরফে সিরিজে বাপি সেনের পক্ষের আইনজীবী পৃথা রায়ের। এদিনের ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠানে নিজেকে কালো পোশাকে মুড়ে এসেছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান মঞ্চে সাংসদ-নায়িকার দাবি, ‘‘আমার আর টোটাদার কমন ফ্যাক্টর, আমরা প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় কাজ করেছি। ‘চোখের বালি’র ‘বিহারী’তে টোটাদার অভিনয় আজও মনে রেখেছি।’’ অরিন্দম শীলের ধনঞ্জয়, রাজ চক্রবর্তীর প্রলয় এবং চন্দ্রাশিসের সিরিজ-- তিনটিই সত্যি ঘটনার উফরে তৈরি। তিনটিতেই তিনি প্রতিবাদী চরিত্রে। এই ধরনের চরিত্র বা চিত্রনাট্যই কি মিমিকে বেশি আকর্ষণ করে? আজকাল ডট ইনের প্রশ্নে নায়িকার জবাব, ""গল্প আসার উপরে নির্ভর করে। আমরা তো অনেক কিছুই করতে চাই। একজন অভিনেতার কাছে সঠিক গল্পটাও তো আসতে হবে। আমি ভাগ্যবান, বারবার এই ধরনের পছন্দের গল্প বা চিত্রনাট্য পেয়েছি। আর তাতে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছি।"" প্রত্যেকটি ঘটনা বার্নিং ইস্যু। যা এখনও প্রাসঙ্গিক এবং সমসাময়িক। কেন এই ধরনের ঘটনা নিয়ে বারবার কাজ হচ্ছে? ""প্রথমত, আমাদের শহর বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ শহরের তকমা পেয়েছে। ফলে, প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কোনও প্রশ্নই নেই। দ্বিতীয়ত, ২০ বছর আগে আমি খুবই ছোট। তখনকার এই ঘটনা মনে নেই। এবং সেই সময় আমি কলকাতায় থাকতামও না। তাছাড়া, এটা কিন্তু পুরোটাই বাপি সেনের উপরে তৈরি সিরিজ নয়। তাঁর জীবনের ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তৈরি। যেখানে তাঁর হয়ে ন্যায় চাইবে আইনজীবী পৃথা রায়। সিরিজটি আদতে পৃথা রায়ের উপরে আবর্তিত।""

‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ বাস্তবে মানতে গেলে হাজার সমস্যা। মিমি কোনও দিন সত্যি বলে বিপদ বা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন? অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এমন প্রসঙ্গ তুলে মিমির বার্তা, সত্যি বলতে গিয়ে তিনি অনেক সময়েই বিপদে পড়েছেন। তারপরেও তিনি সত্যি বলা থেকে সরে আসেননি। চেষ্টা করেন, সত্যের পথে থাকতে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। সেটা তাঁর কাছের মানুষ এবং ইন্ডাস্ট্রিও জানে।